৪ দিনে নেপাল: পাহাড়, শান্তি আর স্বপ্নের গল্প
- Sakif Ahsan
- Sep 29
- 2 min read
Updated: Oct 5

প্রথম দিন – কাঠমান্ডু ভ্যালি - ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে কয়েক ঘণ্টার পথ। প্লেন যখন নেপালের আকাশে ঢুকল, তখন জানালা দিয়ে প্রথম যে দৃশ্য চোখে পড়ল তা হলো বরফে মোড়া পাহাড়শ্রেণি। মনে হলো পৃথিবীটা কত বিশাল আর সুন্দর!
কাঠমান্ডু পৌঁছেই শহরের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। এখানে আধুনিকতা আর ঐতিহ্যের অদ্ভুত মেলবন্ধন। পশুপতিনাথ মন্দির আর বৌদ্ধনাথ স্তূপ যেন সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভক্তদের প্রার্থনার শব্দ আর ধূপের গন্ধে মনে হলো আমি যেন অন্য এক জগতে এসে গেছি। সন্ধ্যার কাঠমান্ডু শহর আলো আর হাসিতে ভরে উঠল—ছোট্ট ক্যাফে, দোকান আর মানুষের ভিড়ে শহরটা যেন জীবন্ত হয়ে উঠল।
দ্বিতীয় দিন – লুম্বিনী (বুদ্ধের জন্মস্থান) - সকালে রওনা হলাম লুম্বিনীর পথে। লুম্বিনী পৌঁছেই মনে হলো এ জায়গার প্রতিটি ধূলিকণা শান্তির বার্তা বহন করে। এখানে দাঁড়িয়ে ইতিহাস যেন ফিসফিস করে বলল—"এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ।"
সাদা স্তূপ আর বাগানের মাঝে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল ভেতরের সব অশান্তি গলে যাচ্ছে। বাতাসে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, যেন কেউ ভেতরে ভেতরে শান্ত হতে শিখিয়ে দিচ্ছে। মন্দির ঘুরতে ঘুরতে বুঝলাম—নেপাল শুধু একটি দেশ নয়, এটি আসলে এক আধ্যাত্মিক যাত্রা।
তৃতীয় দিন – এভারেস্ট রিজিয়ন (হিমালয়ের টান) - এই দিনটা ছিল ভ্রমণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। হিমালয়ের দিকে এগোতে এগোতে চোখের সামনে ক্রমে উঁচু হতে লাগল বরফঢাকা পর্বত। গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হলো—আমি যেন কোনো বিশাল চিত্রকর্মের ভেতরে আছি।
সকালবেলা হেলিকপ্টার রাইডে কাছ থেকে এভারেস্ট দেখার সুযোগ হলো। পৃথিবীর চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল সেই পর্বত দেখে গায়ে কাঁটা দিল। এত বড়, এত মহিমান্বিত! মনে হলো মানুষ আসলে কত ক্ষুদ্র। পাহাড় যেন নীরবে বলছে—“তুমি তোমার জীবনের লড়াই জিততে পারবে।”
চতুর্থ দিন – চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক - শেষ দিন কাটালাম চিতওয়ানে। সবুজে ভরা এই বনে হাতি, গন্ডার আর নানা প্রজাতির পাখি যেন একসাথে বাস করছে। জঙ্গল সাফারির সময় মনে হচ্ছিল আমি যেন কোনো প্রাচীন গল্পের ভেতরে আছি। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে মনে হলো—প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বোঝার জন্য আসলে নেপালের মতো জায়গায় একবার হলেও আসা জরুরি।
ফেরার পথে - চার দিনের এই ভ্রমণ শেষে মনে হলো নেপাল শুধু একটি দেশ নয়, বরং জীবনের এক অভিজ্ঞতা। এখানে আছে পাহাড়ের দৃঢ়তা, বৌদ্ধের শান্তি, প্রকৃতির সৌন্দর্য আর মানুষের সরল হাসি।
নেপাল আমাকে শিখিয়েছে—ভ্রমণ মানে শুধু দেখা নয়, ভ্রমণ মানে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া।
সারাংশ (Nepal)
কাঠমান্ডুর ইতিহাস, লুম্বিনীর শান্তি, এভারেস্টের মহিমা আর চিতওয়ানের বন্য সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে নেপাল হলো এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। ৪ দিনের এই যাত্রা মনে করিয়ে দেয়, ভ্রমণ আসলে এক জীবন্ত কবিতা।



Comments