ভুটান ভ্রমণ: সুখের রাজ্যে তিন দিনের গল্প
- Sakif Ahsan
- Sep 29
- 2 min read

প্রথম দিন – মেঘের কোলে যাত্রা : ঢাকা বিমানবন্দর থেকে প্লেনে উঠতেই ভেতরে অদ্ভুত এক উত্তেজনা কাজ করছিল। জানালার বাইরে তাকাতেই দেখা গেল সাদা সাদা মেঘ। মনে হচ্ছিল যেন মেঘের ভেলায় ভেসে যাচ্ছি অচেনা কোনো স্বপ্নপুরীর দিকে। ঘণ্টাখানেক পর যখন ভুটানের আকাশে নামতে শুরু করল প্লেন, তখন চোখের সামনে যে দৃশ্য ধরা দিল তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে আঁকাবাঁকা নদী আর হালকা কুয়াশা—সবকিছু মিলেমিশে এক পরীর দেশের মতো লাগছিল।
বিমান থেকে নেমে প্রথম যে বিষয়টি মনে হলো—এখানে বাতাস অন্যরকম। শহরের ধোঁয়া, কোলাহল নেই। বাতাসে আছে পাহাড়ি ঠান্ডা আর অদ্ভুত এক প্রশান্তি। গাড়িতে করে রাজধানী থিম্ফুর পথে রওনা হলাম। রাস্তা জুড়ে সবুজ পাহাড়, পাইনগাছের সারি, মাঝে মাঝে ছোট্ট গ্রাম—যেন ছবির বইয়ের দৃশ্য চোখের সামনে।
দ্বিতীয় দিন – থিম্ফু শহরের আবেশ : সকালে উঠে দেখি জানালার বাইরে পাহাড়ের গায়ে মেঘ ঝুলে আছে। থিম্ফু শহর অন্য রকম। এখানে নেই আকাশছোঁয়া বিল্ডিং বা কোলাহলমুখর ট্রাফিক। শহরটা ছোট হলেও এতে লুকিয়ে আছে রাজকীয় সৌন্দর্য আর গভীর শান্তি।
দিনের প্রথম গন্তব্য ছিল বুদ্ধা ডর্ডেনমা স্ট্যাচু—বিশাল পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সোনালি রঙের বুদ্ধমূর্তি। দূর থেকে সেটি দেখেই মনে হলো পাহাড় যেন মানুষের শান্তির জন্য পাহারাদার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, সমস্ত দুঃখ-কষ্ট যেন গলে যাচ্ছে।
শহরের পথে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল দোকানপাট, ঐতিহ্যবাহী পোশাক গহো ও কিরা পরে থাকা মানুষজন, আর প্রার্থনার চাকা ঘোরানো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাদের শান্ত মুখ দেখে মনে হলো—সুখ আসলে বড় বাড়ি বা দামি গাড়িতে নয়, সুখ আসলে সহজ জীবন আর খুশির হাসিতে।
বিকেলে গেলাম থিম্ফু দজং—রাজপ্রাসাদ ও সরকারি কার্যালয়ের বিশাল এক ভবন। লাল, সাদা আর সোনালি রঙের কারুকাজে সাজানো দজং দেখতে দেখতে মনে হলো আমি যেন কয়েকশ বছর পেছনে চলে গেছি।
তৃতীয় দিন – পারো টাকসাং (Tiger’s Nest) : সকালে রওনা হলাম ভুটানের সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা—পারো টাকসাং মঠ। স্থানীয়রা একে বলে "Tiger’s Nest"।
পাহাড়ের একেবারে খাড়া দেয়ালে দাঁড়িয়ে আছে এই মঠ। উপরে উঠতে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় লেগে গেল। পথটা সহজ ছিল না—কখনও খাড়া উঁচু, কখনও আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে মনে হচ্ছিল আমি যেন স্বপ্নের আরও কাছে চলে যাচ্ছি।
অবশেষে যখন মঠটা চোখের সামনে এল, মনে হলো এ যেন আকাশের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এক জাদুর ঘর। সাদা দেয়াল, লাল ছাদ আর তার চারপাশে উড়তে থাকা হাজারো প্রার্থনার পতাকা—হৃদয়ের ভেতর অদ্ভুত এক প্রশান্তি নেমে এল। বাতাসে তখন শুধু পাহাড়ি হাওয়া আর ঘণ্টাধ্বনির শব্দ।
ফেরার পথে : তিন দিনের ভ্রমণ শেষ। কিন্তু ভুটান আমার মনে রেখে গেল অন্যরকম এক ছাপ। আমি শিখলাম, সুখ মানে সবকিছু পাওয়া নয়, সুখ মানে শান্ত থাকা। ভুটান আমাকে শিখিয়েছে—জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো প্রশান্তি।



Comments